উপন্যাস কাকে বলে? উপন্যাসের রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
‘উপন্যাস’ সাহিত্যের একটি বিশেষ শাখা। এই শাখা একদিকে যেমন আধুনিক, তেমনই সবচেয়ে জনপ্রিয় শাখাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক শ্রীশচন্দ্র দাশ উপন্যাসকে সবচেয়ে জনপ্রিয় শাখা বলে অভিহিত করেছেন। যে কোন সাহিত্যের এই দুটি শাখার পাঠক বেশি। উপন্যাসের সুনির্দিষ্ট করে সংজ্ঞা দেওয়া আজও বেশ কঠিন। বিভিন্ন লেখক এবং প্রাজ্ঞ পণ্ডিতগণ নিজেদের মতো করে উপন্যাসের সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সেগুলো আলোচনাপূর্বক উপন্যাস বৈশিষ্ট্য নিম্নে আলোচনা করা হলো-
উপন্যাসের সংজ্ঞা : উপন্যাস হলো গদ্যে রচিত এমন একটি বিশেষ সাহিত্যকর্ম যার ভেতর দিয়ে সমকালীন সময় ও মানব-জীবনের পূর্ণাঙ্গ রুপ ও দর্শন প্রকাশ পেয়ে থাকে। কেউ কেউ বলছেন-‘গ্রন্থাকারের ব্যক্তিগত জীবনদর্শন ও জীবনানুভূতি কোন বাস্তব কাহিনি অবলম্বনে যে বর্ণনাত্মক শিল্পকর্ম রুপায়িত হয়, তাকে উপন্যাস বলে।’ সাহিত্য সমালোচক র্যালফ ফক্্র ‘নভেল এ্যান্ড দ্যা পিপল’ গ্রন্থে বলছেন-‘ উপন্যাস হলো মানুষের জীবনের গদ্য, উপন্যাস হলো মানুষকে সম্পন্নভাবে গ্রহণ করার ও তাকে অভিব্যক্তি দেবার প্রথম নান্দনিক প্রচেষ্টা।’ তাই আমরা সংক্ষেপে বলতে পারি, পূর্ণাঙ্গ মানব-জীবনের নান্দনিক উপস্থাপনাই উপন্যাস।
১. উপন্যাসে জীবনের পূর্ণাঙ্গ রুপ উপস্থাপন করা হয়
২. উপন্যাসের কাহিনির গতি লাগামহীন হতে পারে
৩. উপন্যাসের বহু কাহিনি, উপকাহিনি থাকতে পারে
৪. উপন্যাসে চরিত্রের সংখ্যা বহুল পরিমাণে থাকতে পারে
৫. উপন্যাসে অনেক বিষয় অবতারণার সুযোগ থাকে
৬. উপন্যাসে বিষয় বিশ্লেষণের সুযোগ থাকে।
৭. উপন্যাসের ব্যাপ্তি বেশি থাকে
৮.উপন্যাস পড়তে অনেক সময় লাগতে পারে
৯. উপন্যাস এক বসাতে সাধারণ শেষ হয় না
১০. উপন্যাসে দেশের যে কোন বিষয় পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ করা যায়
১১. উপন্যাসে সরাসরি বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ থাকে
১২. উপন্যাসের পরিণতিতে ইঙ্গিত থাকে না
১৩. উপন্যাসে পাঠকের অতৃপ্তি থাকে না
১৪. উপন্যাস সমাপ্তি পাঠক বুঝতে পারে
১৫. উপন্যাস সমাপ্ত হয়ে যায়
উপর্যুক্ত বিষয়ের আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে বোঝা যায়, উপন্যাস ও ছোটগল্প বাংলা সাহিত্যের বিশেষ জনপ্রিয় শাখা। উভয়ই গদ্যে রচনা করা হয়। উপন্যাসের ব্যপ্তি ও আয়তন বড় হয়। আর ছোটগল্পের ব্যপ্তি ও আয়তন ছোট হয়। উপন্যাসে মানব-জীবন ও জগৎ পূর্ণাঙ্গভাবে উপস্থাপিত হয়। আর ছোটগল্পে মানব-জীবন ও জগৎ খণ্ডিতভাবে উপস্থাপিত হয়।