পয়ার ছন্দ কী? পয়ারের প্রকারভেদ আলোচনা কর। 231005

অনার্স ৩য় বর্ষ

পয়ার ছন্দ কী ? পয়ারের প্রকারভেদ আলোচনা কর।

পয়ার ছন্দ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন ছন্দ। মধুসূদন দত্ত এই ছন্দ পয়ার ছন্দের উপর ভিত্তি করে ছন্দ পুননির্মাণ করেন। এক সময় কবিরা পয়ার ছন্দে কবিতা রচনা করতেন। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেও পয়ার ছন্দে প্রচুর কবিতা রচনা করেছেন। পয়ার ছন্দে কবিতার একটি চরণে দুইটি পর্ব থাকে, প্রথম পর্বে আট মাত্রা এবং শেষ পর্বে ছয় মাত্রা মিলে মোট চৌদ্দ মাত্রা থাকে। একটি চরণের সাথে আরেকটি চরণের মিল থাকতো, অর্থ চরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো-সংক্ষিপ্তভাবে এই হলো পয়ার ছন্দ।

পয়ার ছন্দ ভেঙ্গে তিনি ‘অমিত্রাক্ষর’ নামে একটি নতুন ছন্দ সৃষ্টি করলেন। এই ছন্দেও পয়ারের মতো চৌদ্দ মাত্রা আছে, প্রতিটি চরণে দুটি পর্ব আছে, প্রথম পর্বে আট মাত্রা এবং শেষ পর্বে ছয় মাত্রা মিলে মোট চৌদ্দ মাত্রা হয়। তবে এ ছন্দে এক চরণের সাথে আরেক চরণের অন্ত্যমিল নেই, অর্থের প্রবাহমানতা আছে-এটাই অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রাণ। এটা মাইকেলের নিজস্ব সৃষ্টি। পয়ার ছন্দ আসলে অক্ষরবৃত্ত ছন্দ বা অমিত্রাক্ষর ছন্দেরই প্রাচীন নাম।

পয়ার ছন্দের প্রকারভেদ : পয়ার ছন্দ নানা প্রকারের। মাত্রা সংখ্যার দিক থেকে এবং মিল বিন্যাসের দিক থেকে পয়ার ছন্দ নানা প্রকারের। এখানে প্রধান প্রধান পয়ার ছন্দের বর্ণনা দেওয়া হলো-

১. মহাপয়ার ছন্দ : মাত্রা সংখ্যা গণনার দিক থেকে মহাপয়ার পয়ার ছন্দেরই সম্প্রসারিত রুপ। পয়ারের প্রতি চরণে মাত্রা সংখ্যা ৮+৬=১৪, আর মহাপয়ারে ৮+১০=১৮। প্রতি চরণে দুটি পর্ব থাকে।

২. প্রবহমান পয়ার ছন্দ : পয়ারের সঙ্গে প্রবহমান পয়ারের মূল পার্থক্য একটি জায়গায়। পয়ারে প্রতি চরণে ভাব আংশিকভাবে সমাপ্ত হয়। প্রবহমান পয়ারের ভাবের সমাপ্তি অপরিহার্য নয়। কেউ কেউ একে সমিল অমিত্রাক্ষর ছন্দ বলে থাকেন। চরণ শেষে মিল উঠিয়ে দিলে অমিত্রাক্ষর ছন্দ হয় আর মিল দিলে প্রবহমান পয়ার ছন্দ হয়।

৩. প্রবহমান মহাপয়ার ছন্দ : পয়ার ছন্দ ও প্রবহমান পয়ারের মতো মহাপয়ার ও প্রবহমান মহাপয়ারেরও মূল পার্থক্য একটি জায়গায়। মহাপয়ারের ভাব আংশিকভাবে সমাপ্ত হওয়ার নিয়ম। প্রবহমান মহাপয়ারে ভাবের পরিসমাপ্তি হওয়া অনিবার্য নয়। ভাব পরবর্তী চরণে প্রবাহিত হতে পারে।

৪. অমিত্রাক্ষর ছন্দ : যে পয়ার ছন্দে প্রতি পঙক্তি বা চরণে যতি ও ছেদের মিত্রতা অনিবার্য নয় এবং চরণ শেষে অমিল থাকলে তাকে অমিত্রাক্ষর ছন্দ বলে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত সর্ব প্রথম ‘মেঘনাদবধ’ কাব্যে সফল অমিত্রাক্ষর ছন্দের সফল প্রয়োগ দেখিয়েছেন।

৫. গৈরিশ ছন্দ : মাইকেল মধুসূদন দত্ত অমিত্রাক্ষর ছন্দ অনুসরণ করে গৈরিশ ছন্দের প্রয়োগ দেখিয়েছেন। নাট্যকার গিরিশ চন্দ্র ঘোষ এ ছন্দের ¯্রষ্টা হওয়ায় তার নামে এ ছন্দের নামকরণ করা হয়েছে। গৈরিশ ছন্দে পর্ব নির্দেশ করা হয় ছেদের দ্বারা। অন্তমিলের ব্যবহার সর্বত্র দেখা যায় না।

৬. মুক্তক ছন্দ : মুক্তক ছন্দ আসলে অক্ষরবৃত্ত ছন্দেরই অন্য রুপ। এই ছন্দে ভাব পঙক্তি থেকে পঙক্তিতে প্রবাহিত হয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘মানসী’ কাব্যের ‘নিষ্ফল কামনা’ কবিতায় মুক্তক ছন্দ ব্যবহার করেছেন। ‘বলাকা’ কাব্যে এ ছন্দের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়।

৭. অমিল মুক্তক ছন্দ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অমিল মুক্তক ছন্দ সৃষ্টি করেছেন। এই ছন্দে গদ্যের স্বাভাবিকতা দেখা যায়। কেউ কেউ একে অস্ফূট ছন্দ বলে মতামত দিতে চান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *