সনেট কী? সনেটের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
(সনেট রচনায় মধূসূদন অথবা রবীন্দ্রনাথের সফলতা / বিফলতা পরীক্ষায় আসতে পারে)
সনেট শব্দটি বিশেষ্য পদ, ইতালীয় শব্দ ‘সনেটো’ থেকে ‘সনেট’ শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে। ‘বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’ অনুযায়ী ‘সনেট’ শব্দটির অর্থ হলো চোদ্দ অক্ষর বিশিষ্ট চোদ্দ ছত্রের এক প্রকার কবিতা। তাই বিশেষ এক প্রকার কবিতার নাম হলো ‘সনেট’। বাংলা ভাষায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রথমে সনেট রচনা করেন। বিশ্বসাহিত্যে সনেটের উৎপত্তি ও বিকাশ অনেক পূর্বে।
ইতালির কবি পেত্রার্ক সর্বপ্রথম সনেট সৃষ্টি করেন। এ জন্য পেত্রার্ককে সনেটের জনক বলা হয়ে থাকে। এরপর দান্তে, ট্যাসো প্রভৃতি লেখকগণ কিছু সফল সনেট রচনা করেন। সনেট আর ইতালি ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে নি। ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা ও সাহিত্যে। বিশ্ববিখ্যাত নাট্যকার শেকসপিয়ারের হাতে অনেক সুন্দর সনেট রচিত হয়েছে। তাছাড়া কীটস, মিলটন, ওয়ার্ডসওয়ার্থসসহ অনেকেই সনেট রচনায় কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে সনেট রচনায় প্রথম সফলতা দেখান বিদ্রোহী কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। ‘বঙ্গভাষা’ কবিতাটি মাইকেলের একটি উৎকৃষ্ট সনেট। এরপর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সনেট রচনায় সফলতা দেখান।
সনেটের সংজ্ঞা : চোদ্দ লাইনের কবিতার মধ্য দিয়ে একটি বিশেষ ভাব অখ-ভাবে প্রকাশিত কলে তাকে সনেট বলে। এ জন্য সনেটকে চতুর্দশপদী কবিতাও বলা হয়। অধ্যাপক শ্রীশচন্দ্র দাস ‘সাহিত্য সন্দর্শন’ নামক গ্রন্থে সনেটের সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে-‘একটি মাত্র অখণ্ড ভাব কল্পনা বা অনুভূতি-কণা যখন চোদ্দ অক্ষর সমন্বিত চতুর্দ্দশ পঙ্কক্তিতে একটি বিশেষ ছন্দরীতিতে আত্মপ্রকাশ করে, তখন আমরা উহাকে সনেট নামে অভিহিত করি।’ সুতরাং ‘সনেট’ হলো চোদ্দ লাইনের এক ধরনের বিশেষ কবিতার নাম এবং এই কবিতায় কবিমনের একটি সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ হয়।
সনেটের বৈশিষ্ট্য : সনেটের অনেক বৈশিষ্ট্য আছে। পর্যায়ক্রমে নিম্নে সনেটের বৈশিষ্ট্যগুলো এভাবে আলোচনা করা যেতে পারে :
১.সনেটে সাধারণত চোদ্দটি চরণ থাকে।
২.প্রতিটি চরণে সাধারণত চোদ্দটি অক্ষর থাকে।
৩.সনেটে একটি ভাব প্রকাশ পায়।
৪.একটি সনেটে দুটি অংশ থাকে।
৫.প্রথম অংশে সাধারণত আটটি চরণ থাকে, এ অংশটিকে অষ্টক বলা হয়।
৬.দ্বিতীয় অংশে সাধারণত ছয়টি চরণ থাকে, এ অংশটিকে ষটক বলা হয়।
৭.দুটি অংশে একটি মাত্র ভাবনা ছড়িয়ে থাকে।
৮.সনেটের প্রথম অংশে একটি ভাবের আংশিক ইঙ্গিত থাকে।
৯.দ্বিতীয় অংশে পরিপূর্ণ ভাব প্রকাশ হয়।
১০.সনেটে ভাবের গভীরতা থাকে।
১১.সনেটে ভাবের প্রবহমানতা থাকে।
১২. সনেটে ভাষায় সরলতা থাকে।
১৩.সনেটে সংযম থাকবে।
১৪.সনেটে কবিতার চরণের মিল বিন্যাস থাকে।
১৫.এই মিল বিন্যাস সাধারণত কখখক, কখখক, গঘঙ, গঘঙ।
কবি মোহিতলাল এই মিল বিন্যাস রেখে কবিতা রচনা করেছেন। তবে মিল বিন্যাসের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও দেখা যায়। অনেকেই সনেট রচনায় মিল বিন্যাসের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা নিয়েছেন, যেমন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজের মতো করে সনেট রচনা করেছেন। শেকসপিয়ারও সনেট রচনায় সব বৈশিষ্ট্য রক্ষা করতে পারেন নি। তবে এটা সত্য যে, সনেট কবিতায় বিশেষ সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। বাংলা ভাষায় অনেক সুন্দর সনেট আছে।
সালেক শিবলু, এমফিল গবেষক, বাংলা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর