ব্যঞ্জনধ্বনি বিচারের মাফকাঠি কী? স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনিগুলো বিশ্লেষণ করো।

ব্যঞ্জনধ্বনি বিচারের মাফকাঠি কী? স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনিগুলো বিশ্লেষণ করো।

অথবা, (স্পৃষ্ট ব্যঞ্জন/স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনির বৈশিষ্ট্য/উচ্চারণস্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জনের শ্রেণিবিভাগ)

উচ্চারণস্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জনের শ্রেণিবিভাগ ফুসফুস আগত বাতাস বাপ্রত্যঙ্গের ঠিক যেখানে বাধা পাওয়ার ফলে কোনো ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হয় সে স্থানটিই হল সেই নির্দিষ্ট ব্যঞ্জনের উচ্চারণস্থান। ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে যেসব প্রত্যঙ্গ সাক্ষাৎভাবে ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ যে প্রত্যঙ্গগুলি উচ্চারণে প্রধান ভূমিকা নেয় সেগুলির প্রত্যেকটিকে এক একটি উচ্চারক বলা হয়। ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণে সাধারণত সক্রিয় উচ্চারক ও নিষ্ক্রিয় এই দুটি উচ্চারক জড়িত থাকে। ব্যঞ্জনধ্বনি বিচারের মাপকাঠি বাংলাদেশের অন্যতম ভাষাবিজ্ঞানী মহাম্মদ দানীউল হক তাঁর ‘ভাষাবিজ্ঞানের কথা’ গ্রন্থে ব্যঞ্জনধ্বনি বিচারের মাপকাঠি পঁচটি পলে উল্লেখ করেছেন । এগুলো হলো-

১. উচ্চারণস্থান ২. উচ্চারণ রীতি ৩. কোমল তালুর অবস্থা ৪. স্বরযন্ত্রের অবস্থা ৫. স্বল্পতা ও মহা স্পষ্ট

যে সকল ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণকালে ফুসফুস থেকে আগত বাতাস বায়ু মুখবিবরের মাঝখানে কোথাও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং পরমুহূর্তে স্বয়ংক্রিয় ভাবে সজোরে বাইরে বেরিয় যায়, তাদেরকে সৃষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি বা স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি বলে । ড. আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ ‘আধুনিক ভাষাতত্ত্ব’ গ্রন্থে স্পষ্ট ধ্বনি ২০টি বলে উল্লেখ করেছেন।

স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি : ভাষাবিজ্ঞানী ড. আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ তাঁর ‘আধুনিক ভাষাতত্ত্ব’ নামক গ্রন্থে স্পৃষ্ট ব্যঞ্জন ধ্বনিগুলোকে নিন্মোক্ত ভাবে সাজিয়েছেন-

অঘোষঘোষ
অল্পপ্রাণমহাপ্রাণঅল্পপ্রাণমহাপ্রাণ
জিহ্বামূলীয়
তালব্য
মূর্ধন্য
দন্ত
ওষ্ঠ

 

ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় নির্গত বাতাসের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে বাংলা স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়- অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ স্পর্শবাঞ্জনধ্বনি । স্বরযন্ত্রের অবস্থার উপর ভিত্তি করেও করে বাংলা স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনিকে ঘোষ ও অঘোষ দুই ভাগে ভাগ করা যায় ।

উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী বাংলা স্পর্শবানধ্বনির বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণিবিভাজন : স্পর্শনাঞ্জনধ্বনিগুলো কোথা থেকে কীভাবে উচ্চারিত হয় এবং এর উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিশিষ্ট ভাষাবিজ্ঞানী মুহাম্মদ দানীউল হক তাঁর ‘ভাষা বিজ্ঞানের কথা’ গ্রন্থে বলেন-

১. কণ্ঠমূলীয় বা জিহবামূলীয় স্পর্শব্যঞ্জনধ্বনি : ক, খ, গ, ঘ। উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য জিভের মূলটি কোমল তালুতে স্পর্শ করে বায়ুকে রুদ্ধ করে এট
ধ্বনিগুলো উৎপন্ন করছে ।

২. তালব্য দন্তমূলীয় ধ্বনি বা তালুজাত স্পর্শধ্বনি : চ, ছ, জ, ঝ। উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য তালু আর দাঁতের গোড়ার মাঝামাঝি জিভ স্পর্শ করে ।
৩. মূর্ধণীয় স্পর্শঘনি : ট,ঠ, ড, ঢ । উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য জিভ দাঁতের গোড়ায় স্পর্শ করছে ।
৪. দন্তধ্বনি : ত, থ, দ, ধ । উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য এখানে দাঁতের পিছনে জিভ দিয়ে বাতাসকে রুদ্ধ করা হচ্ছে।
৫. ওষ্ঠধ্বনি (দ্বিওষ্ঠ স্পৃষ্ঠ ব্যঞ্জনধ্বনি) : প, ফ, ব, ভ । উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য উচ্চারণের সময় বাতাসকে দুই ঠোঁট দিয়ে রুদ্ধ করা হচ্ছে এ মুহাম্মদ দানীউল হক এ ধ্বনিগুলোকে পৃষ্ঠ ব্যঞ্জনধ্বনি বলেছেন।

উপর্যুক্ত আলোচনায় দেখা যায় যে, বাংলা স্পর্শব্যঞ্জন ধ্বানিগুলোর প্রত্যেকটির স্বাতন্ত্রিক ধ্বনিতাত্মিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান । এসব ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের আলোকে একটি ধ্বনিকে অন্য ধ্বনি থেকে সহজেই আলাদা করা যায়। সে জন্যে এ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বাংলা স্পর্শ বাঞ্জনধানির পৃথক পৃথক নামকরণ করা হয়েছে।