বিসিএস লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি নির্দেশনা
জুনায়েদ হোসেন,সহকারী কর কমিশনার, ৩৮তম বিসিএস (বিসিএস কর)
বিসিএস লিখিত পরীক্ষা এবং ভাইভা পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে বিসিএস ক্যাডার বণ্টন করা হয়, সে হিসেবে বলতে গেলে লিখিত এবং ভাইভা ই হলো মূল বিসিএস পরীক্ষা। প্রিলিমিনারি হলো এন্ট্রি টেস্ট যাইহোক, লিখিত পরীক্ষা হলো ৯০০ নম্বরের একটি ম্যারাথন পরীক্ষা। জেনারেল ক্যাডারের ৯০০ নম্বরের মধ্যে বাংলা ২০০, ইংরেজি ২০০, গণিত ও মানসিক দক্ষতা ১০০, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি ১০০, বাংলাদেশ বিষয়াবলী ১০০ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। টেকনিক্যাল বা প্রফেশনাল ক্যাডারের ক্ষেত্রে বাংলা ১০০ এবং বিজ্ঞান বাদ দিয়ে সংশ্লিষ্ট ২০০ নম্বরসহ মোট ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। আর যারা বোথ এ পরীক্ষা দেয় তাদের সাধারণ ৯০০ এবং টেকনিক্যাল এর জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ২০০ সহ মোট ১১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়।
৫০% নম্বর হলো লিখিত পাশ নম্বর। অর্থাৎ ৯০০ এর মধ্যে ৪৫০ পেলে পাশ। তবে ক্যাডার পেতে হলে ৬০% এর মতো বা ৫৪০ এর মতো নম্বর লাগে। এর চেয়ে যত বেশি পাবেন, তত ভালো ক্যাডার আসবে।
লিখিত পরীক্ষার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ পরীক্ষার পাঁচ-সাতদিনের শারীরিক পরিশ্রম। পুরো পরীক্ষার সময়টা সুস্থ থেকে পরীক্ষা দিতে পারাটাই একটা সাফল্য।
বিসিএস লিখিত পরীক্ষা হলো টেস্ট ক্রিকেটের মতো। এখানে ছোটোখাটো ভুল হলে পরের পরীক্ষায় পুষিয়ে নেওয়া যায়। ৯০০/১১০০ নম্বরের মধ্যে সবাই ই কোন না কোন সাবজেক্ট এ সামান্য দুর্বল থাকবে। সুতরাং এটা একটা মোটামুটি লেভেল প্লেইং ফিল্ড। যারা লিখিত দিবেন, নিশ্চিতভাবেই আপনারা প্রিলিমিনারি পাশ করেছেন। সুতরাং আপনি ইতোমধ্যে ৯৬% কে ডিঙিয়ে শীর্ষ ৪% এ আছেন। পরের কাজটুকু ঠিকঠাক করতে পারলেই আপনি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন।
গতবছর কোভিডে আক্রান্ত থাকা অবস্থায় আমি একটা ভালো কাজ করেছি। লিখিত পরীক্ষার সব সাবজেক্ট এর জন্য আলাদা ভিডিও করে আমার ইউটিউব চ্যানেল এ দিয়েছি ( চ্যানেলের নাম Jonayed Hossain)। সেখানে সব বিষয়ের জন্য বিস্তারিত পরামর্শ দিয়েছি। দেখে নিলে আশাকরি উপকৃত হবেন । আমি আসলে সহজ করে ভাবতে ভালোবাসি, সহজ করে বলি এবং নিজেও সহজ করে শিখি ও শিখাই। বিসিএস এর পড়াশোনা আসলে খুব কঠিন পড়াশোনা না। সিলেবাসটা বড় এবং দীর্ঘ সময় ধরে একটা কিছু নিয়ে পড়ে থাকা লাগে এটাই এই পরীক্ষার সবচেয়ে কঠিন পার্ট। পড়াশোনা পারলে কিছুটা কম করবেন। তবে যেটা করবেন ভালোভাবে করবেন।
কী কী পড়বেন..
১. আপনার প্রথম কাজ হবে ৩৫ থেকে শুরু করে সর্বশেষ বিসিএস এর লিখিত প্রশ্নগুলো ভালোভাবে দেখা। এখান থেকেই আপনি বুঝবেন আপনি কোথায় আছেন, কী কী গ্যাপ আছে, কী কী পড়তে হবে। এরপর লিখিত সিলেবাসটা ভালোভাবে পড়বেন।
২. লাইব্রেরিতে গিয়ে কিছুক্ষণ পড়ে ভালো লাগে এমন একটা লিখিত ডাইজেস্ট কিনবেন। এটা আপনার মূল ম্যাটেরিয়াল। লিখিত পড়া অনেক বেশি। তাই পড়া কমানোর জন্য ডাইজেস্ট তুলনামূলক বেটার অপশন।
৩. বাংলা সাহিত্যের জন্য প্রিলির সময় পড়েছেন তাতেই চলার কথা। ডাইজেস্ট থেকে এবং বিগত বছরের প্রশ্ন দেখে প্রশ্নের ধরণ বুঝে বাড়তি যোগ করবেন। এখানে খুব বেশি পড়লেও আহামরি লাভ হয় না। তাই হিসেবী হবেন, কত পড়লে কত পাবেন।
ব্যকরণ অংশ তুলনামূলক সহজ। লিখিত সিলেবাস দেখে ভালোভাবে পড়ে নিন। আর অন্যান্য অংশের ফরম্যাট দেখে নিবেন। রচনায় বাণী দেওয়ার জন্য ৫০-১০০ টা সুন্দর বাণী কাগজে লিখে শিখে নিতে পারেন। অনুবাদ অনুশীলন করবেন বেশি বেশি। এটা ইংরেজীর জন্য অনেক কাজে দিবে।
৪. গণিতের জন্য প্রথমে একটা বড় খাতা বানিয়ে পেজ নম্বর দিয়ে নিবেন। এরপর সিলেবাস দেখে অধ্যায়ভিত্তিক ঐ খাতায় একটা সূচিপত্র করে নিবেন। প্রতি অধ্যায়ের অংশে ৩৫ থেকে সর্বশেষ বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষায় আসা ম্যাথগুলো সমাধান করবেন। এরপর নিজেই বুঝবেন আর কী করা লাগবে। কম ম্যাথ করবেন। যেগুলো করবেন ভালোভাবে করবেন।
৫. ইংরেজীর ক্ষেত্রে বেশি বেশি অনুবাদ অনুশীলন করবেন। প্রথমে তুলনামূলক সহজ, এরপর কঠিন। অনুবাদ শেখার সময় অনেক ভোকাবুলারি শেখা হয়ে যাবে, গ্রামার শেখা হয়ে যাবে (বাক্যের গঠন শিখতে)। অনুবাদ পারলে আপনি সবই পারবেন। নিয়মিত লেখার অভ্যাস করবেন।
৬. বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী বিগত সালের প্রশ্ন দেখেন। শুধু ডাইজেস্ট পড়লেই হবে। দুনিয়ার সব পড়ার দরকার নেই। মাঝে মাঝে লেখার অভ্যাস করেন। লিখে নিজে পড়ে দেখবেন। সমস্যা নিজেই বুঝবেন।
৭. বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সিলেবাসে দেখবেন হাইস্কুলের বিজ্ঞানের বই থেকে হুবুহু টপিক তুলে দেওয়া হয়েছে। বইগুলো থেকে অধ্যায়গুলো পড়ে ফেলুন। এরপর বিগত সালের প্রশ্ন দেখলে একটা ক্লিয়ার পথ পাবেন।
৮. মানসিক দক্ষতা হলো এমসিকিউ পরীক্ষা। একটা ভালো গাইড বই ফলো করলেই হবে।
আসলে অনেক কথা বলার আছে। লেখায় এতো কিছু বলা কঠিন। আমার ইউটিউব চ্যানেল এর ভিডিওগুলোতে মোটামুটি সব বলেছি। আশাকরি আপনাদের কাজে লাগবে।
পড়াশোনা করুন। যতটুকু সময় পান সবটাই কাজে লাগান। আপনাদের আলাদা মোটিভেশন দরকার নেই। সামনের পথটা খুব কঠিন না। ধৈর্য ধরে লেগে থাকুন।
সবার জন্য শুভকামনা
জুনায়েদ হোসেন,সহকারী কর কমিশনার, ৩৮তম বিসিএস (বিসিএস কর)