বাংলা স্বরধ্বনি বিচারের মাপকাঠিগুলো কী কী? স্বরধ্বনি বিচারের মাপকাঠি অনুযায়ী বাংলা স্বরধ্বনিসমূহ বিশ্লেষণ কর।
অথবা, (স্বরধ্বনি উচ্চারণের মাপকাঠি/স্বরধ্বনি বিচার বা উচ্চারণের প্রক্রিয়া/ মূল স্বরধ্বনির পরিচয়)
বিশিষ্ট ভাষাবিজ্ঞানী মহাম্মদ দানীউল হক তাঁর ‘ভাষাবিজ্ঞানের কথা’ গ্রন্থে বলেন, ‘পৃথিবীর সকল ভাষাতেই বাগধ্বনিসমূহকে প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয় বা ব্যঞ্জনধ্বনি এবং স্বরধ্বনি । ‘স্বরধ্বনির সংজ্ঞা প্রসঙ্গে দানীউল হক বলেন- ‘ফুসফুসাগত বাতাস গলনালী, মুখবিবর অথবা নাসিকা গহবরের কোথাও বাধাপ্রাপ্ত না হয়ে অবারিত ও ঘোষবৎ পূর্ণাঙ্গ উচ্চারিত হলে তাকে স্বরধ্বনি বলে।
আধুনিক যুগের শুরুতে ১৯২০ সালের দিকে ইংরেজ ধ্বনিবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল জোন্স প্রথমবারের মতো পৃথিবীর যে কোন ভাষার স্বরধ্বনির উচ্চারণ স্বরূপ নির্ধারণ করেন। ভাষাবিজ্ঞানীদের মতে স্বরধ্বনি বিচারের মাপকাঠি ৩ টি । এ গুলো হলো
১.জিহবার উচ্চতা
২.জিহবার কোন অংশ কতটুকু উঁচু বা নিচু হয় ।
৩.ঠোঁট ও চোয়ালের অবস্থান ।
বাংলা স্বরধ্বনি মোট ১১ টি। এগুলো হলো- অ, আ, ই, ঈ, , ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশিষ্ট ভাষাবিজ্ঞানী ড. আবুল কালাম মনজুর মোরশেদের ‘আধুনিক ভাষাতত্ত্ব’ নামক গ্রন্থে বলেন, বাংলা স্বরধ্বনি বিচার/ নির্ণয়ের মাপকাঠি নিম্নরূপ :
ক. জিভের উচ্চতা । খ. জিভের উঁচুভাগের অবস্থান।
গ. জিভের উপরভাগের অবস্থান। ঘ. জিভের মাংসপেশির সংকোচন ও প্রসারণ
ঙ. ঠোঁটের আকৃতি চ.নাসা রন্ধ খোলা না বন্ধ ।
ছ. স্বরযন্ত্রের অবস্থা।
বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ প্রথম খণ্ডে চিত্র অনুযায়ী বাংলা স্বরধ্বনি বিচারের ছকটি নিচে দেওয়া হলো-
বাংলা স্বরধ্বনি
জিভের উচ্চতা জিভের অবস্থান ঠোঁটের উন্মুক্তি
জিভের উচ্চতা | জিভের অবস্থান | ঠোঁটের উন্মুক্তি | ||
সম্মুখ | মধ্য | পশ্চাৎ | ||
উচ্চ | ই | উ | সংবৃত | |
উচ্চ-মধ্য | এ | ও | অর্ধ সংবৃত | |
নিম্ন মধ্য | অ্যা | অ | অর্ধ-বিবৃত | |
নিম্ন | আ | বিবৃত |
১. জিভের অবস্থা অনুযায়ী বাংলা স্বরধ্বনি:
সম্মুখ স্বরধ্বনিই, এ, অ্যা এই জাতীয় স্বরধ্বনি। জিভের সামনের অংশের সাহায্যে উচ্চারিত হয়।
মধ্য স্বরধ্বনি পশ্চাৎ স্বরধ্বনি অ, ও. ঊ এই জাতীয় স্বরধ্বনি। জিভের পশ্চাৎ অংশের সাহায্যে উচ্চারিত হয়
২. জিভের উচ্চতা অনুযায়ী বাংলা স্বরধ্বনি:
উচ্চ স্বরধ্বনি ই, উ, এ জাতীয় স্বরধ্বনি। জিভ সবচেয়ে বেশি উপরে ওঠে উচ্চ- মধ্য স্বরধ্বনি- এ, ও এ জাতীয় স্বরধ্বনি। জিভ নিম্নস্বরধ্বনির উপরে এবং উচ্চস্বরধ্বনির তুলনায় নিয়ে অবস্থান করে। নিম্ন-মধ্য স্বরধ্বনি অ্যা, অ এ জাতীয় স্বরধ্বনি জিভ নিম্ন স্বরধ্বনি থেকে উপরে থাকে। নিম্ন স্বরধ্বনি আ, এ জাতীয় স্বরধ্বনি। জিভ সবচেয়ে নিচে অবস্থান করে।
৩. ঠোটের অবস্থা অনুযায়ী বাংলা স্বরধ্বনি বিবৃত বাংলা স্বরধ্বনি:
আ, এ স্বরধ্বনি উচ্চারণে ঠোঁট সবচেয়ে খোলা থাকে। অর্থ বিবৃত বাংলা স্বরধ্বনি অ্যা ও অ, বিবৃত স্বরধ্বনির তুলনায় ঠোঁট কম খোলা থাকে। অর্ধ সংবৃত বাংলা স্বরধ্বনি- এ, ও সংবৃত স্বরধ্বনির তুলনায় বেশি খোলা ‘ও’ অর্থ বিবৃত স্বরধ্বনির তুলনায় কম খোলা থাকে। সংবৃত বাংলা স্বরধ্বনি ই, উ, ঠোঁট সবচেয়ে কমখোলা থাকে।