বিরামচিহ্ন বলতে কি বোঝ? কমা ও হাইফেন ব্যবহারের নিয়মগুলো লেখ।
‘বিরামচিহ্ন’ কথাটির অর্থ-যে চিহ্নের সাহার্যে কথা বলার সময় জিভের কাজের বিরাম ঘটে। মনোভাব প্রকাশের সময় অর্থ ভালভাবে বোঝানোর জন্যেউচ্চারিত বাক্যের বিভিন্ন স্থানে বিরামচিহ্ন দিতে হয়। লেখার সময়ও অর্থস্পষ্ট করার জন্য বাক্যের মধ্যে কিছু সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। এগুলোই বিরামচিহ্ন বা যতিচিহ্ন বা ছেদচিহ্ন নামে পরিচিত।
কমা(,) ব্যবহারের নিয়ম: কমা(,)পূর্ণযতি নয়,তাই কমা চিহ্ন দিয়ে কোন বাক্য শেষ হয় না। একটি শব্দ থেকে আরেকটি শব্দ আলাদা করার কাজে কমা ব্যবহৃত হয়। যে কোন রচনায় কমার ব্যবহারই বেশি, কমার পূর্বে কোন ফাঁক হয় না কিন্তু কমার পরে প্রায় সব ক্ষেত্রেই ফাঁক হয়।
১. খ-বাক্যের পরে কমা বসে। যেমন- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন বিভিন্ন বয়সের নেতারা; তাঁদের কারো বয়স পনেরোর নীচে, আবার কারো বয়স ষাটের উর্দ্ধে।
২. বাক্যাংশের পরে কমা বসে। যেমন- এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম।
৩. পদের পরে কমা বসে। বিশেষ্যপদের পরে: যেমন- শনি, রবি. সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহ¯প্রতি, শুক্র- এই সাতদিনকে বলে সপ্তাহ।
৪. প্রত্যক্ষ উক্তি রয়েছে এমন বাক্যে প্রত্যক্ষ উক্তির পূর্বে কমা বসে। যেমন- শবনম অবাক হয়ে বলে,“ আপনি কী বলছেন, আমি তার কিছুই বুঝতে পারছি না”
৫. সম্বোধন পদের পরে কমা বসে। যেমন- সুন্দর, তুমি এসেছিলে আজ প্রাতে / অরুণ-বরণ পারিজাত লয়ে হাতে।
৬. অব্যয় জাতীয় পদের পরে কমা বসে। যেমন- হ্যাঁ, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা।
৭. সংখ্যার মধ্যে কমা বসে। যেমন-২,৪৩,৬৬,৯৮৭(দুই কোটি তেতাল্লিশ লক্ষ ছেষট্টি হাজার নয়শত সাতাশি)।
৮. বাংলা বাক্যে দিন তারিখ লেখার সময়ে কমা বসে না, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে কমার ব্যহার দেখতে পাওয়া যায়। যেমন- ১ বৈশাখ, ১৪১৫। আবার- ১ বৈশাখ, ১৪১৫।
৯. ঠিকানার মধ্যে কমা বসে। যেমন- মাহবুবুল হক, ‘অন্তরা”, ১০৫ বাঘঘোনা, চট্টগ্রাম।
১০.উপাধির মধ্যে কমা বসে। যেমন- মুহম্মদ এনামূল হক,এমএ, পিএইচডি।
হাইফেন ব্যবহারের নিয়ম: হাইফেন মূলত পদসংযোজক চিহ্ন। বাক্যের মধ্যে একাধিক পদ হাইফেন দিয়ে যুক্ত করা হয়।
নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে হাইফেন ব্যবহৃত হয়:
১. বাক্যে সমাসবদ্ধ পদে হাইফেন ব্যবহার করতে হয়। যেম-রাজায়-রাজায় যুদ্ধ হয়, উলু-খাগড়ায় প্রাণ যায়।
২. একই পদ পর পর দুবার বসলে মাঝখানে হাইফেন ব্যবহার হয়। যেমন-হাঁটতে-হাঁটতে পায়ে ব্যথা হয়ে গেল।
৩. স্থান বা সময় নির্দেশের ক্ষেত্রে হাইফেন ব্যবহার হয়। যেমন-উত্তর-পশ্চিম কোণে মেঘ লেগেছে।
৪. স্থান বা অনুষ্ঠানের মধ্যে হাইফেন ব্যবহার হয়। যেমন- বাংলাদেশ ও ভারতের মৈত্রী-চুক্তি শেষ হয়েছে।
৫. কোন কোন উপসর্গের পরে হাইফেন বসে। যেমন- অ-তৎসম শব্দ, কু-অভ্যাস, বে-আক্বেল ইত্যাদি।
৬. ভিন্নার্থক বা বিপরীত শব্দের সংযোগ দেখাতে হাইফেন বসে। যেমন- আসা-যাওয়া, হিন্দু-মুসলমান।
৭. স্থানিক পরিচয়ে, ঘটনা বা অনুষ্ঠানের নামকরণে হাইফেন ব্যবহার হয়। যেমন- ঢাকা-বৈঠক, প্যারিস- সম্মেলন।
৮. দুটি নাম বিশেষ্যের সংযোগে। যেমন- নজরুল-রবীন্দ্রনাথের রচনাবলি সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন।
৯. সংখ্যা বা পরিমাণগত ব্যবধান বোঝাতে। যেমন-আবাহনী ২-৪ সেটে মহামেডানের নিকট হেরেছে।
১০. যে ক্ষেত্রে সব শব্দই স্বাধীন, দরকারি ও কারো উপর নির্ভরশীল নয় সেখানে হাইফেন বসে। যেমন-সোনা-রূপা-মনি-মুক্তা কোন কিছুতেই আমার কোন লোভ নেই।